banner
bangla-bar

 

অনলাইনে বিকল্প মিডিয়ার লেখক, সাংবাদিক ও সংগঠক বন্ধুদের প্রতি একটি আবেদন

বিশ্বজিৎ রায়

আমরা সবাই দেশে সঙ্ঘ-কর্পোরেট যৌথ ফ্যাসিবাদের রমরমা নিয়ে চিন্তিত এবং রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন। কর্পোরেট গোদী মিডিয়া এবং সরাসরি সঙ্ঘ-প্রাণিত ও অর্থপুষ্ঠ অনলাইন টিভি চ্যানেল ও পোর্টাল গণ-মাধ্যম ছেয়ে ফেলেছে। এর বাইরে আমরা যে যার যোগাযোগ মতো বড় ও ছোট প্রিন্ট মিডিয়া এবং ডিজিটাল পোর্টাল, রেডিও ও চ্যানেলের মাধ্যমে লিখে বা বলে চলেছি। কিন্তু তা সিন্ধুতে বিন্দু সমান। সামগ্রিক ভাবে আমরা আমাদের অতি সীমিত বামপন্থী প্রতিধ্বনি বলয়ের বাইরে বৃহত্তর মধ্যবিত্ত মানসের কাছেও পৌঁছতে পারছি না। বাঙালি ও অবাঙালি শ্রমজীবীদের কাছে পৌঁছনোর সাধ থাকলেও সাধ্য নেই।

 ইতিমধ্যে কলকাতা থেকে সমমনস্ক বেশ কয়েকটি  নিউজ পোর্টাল তৈরি হয়েছে যা এখনও তুলনায় সহজ ও কম খরচের। অনেকে ইংরেজি এবং বাংলায় লিখছি বা লেখাচ্ছি। কেউ কেউ হিন্দি ও উর্দুতেও। কমবেশি পরিচিত মুখগুলির লেখালেখি। অধিকাংশই মধ্যবয়সী বা প্রবীণতর যাদের পক্ষে ওপিনিয়ন পিস লেখা সম্ভব হলেও জেলায় জেলায় ছুটোছুটি করে সরেজমিন রিপোর্টারি বা তথ্যসমৃদ্ধ, বিশ্লেষণ ধর্মী বা গবেষণামূলক কাজ করা বিশেষ সম্ভব হচ্ছে না। একই লেখকের উপর পাঁচ জায়গায় লেখার জন্য চাপ থাকে।

এদিকে পেশাদারি বৃত্তের বাইরে এখন হাতে হাতে স্মার্টফোন এবং প্রযুক্তি দক্ষতা। কিন্তু ভালো ছবি ও ভিডিও যথাসময়ে মেলা এবং তা এডিট করে হাতে গরম পরিবেশনের কাজ কত কঠিন তা ভুক্তভোগীরা জানেন। সে কারণে ইউ টিউব ইত্যাদি প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে কলকাতা বা জেলা থেকে বাংলায় ভালো দৃশ্য-শ্রাব্য প্রতিবেদন খুব কম। 

সব মিলিয়ে সাধ্য যেটুকু আছে সেটুকুর সদ্ব্যবহার হচ্ছে না আমাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায়। সমব্যথী গবেষণায় দেখা গেছে দুনিয়া জুড়েই বিকল্প মিডিয়ার আর্থিক রেস্তর সমস্যা ছাড়া বড় সমস্যা হল যে আমরা পরস্পরের ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার হিসেবে কাজ করার কথা ভাবি না। সামগ্রিক রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসাবে পরস্পরের পরিপূরক ভূমিকায় নিজেদের দেখিনা। 

বন্ধুদের আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখছি, এই বিচ্ছিন্নতার পিছনে নিউজ ম্যাগ বা পোর্টালের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য এবং রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত বিরোধের চেয়ে বেশি কাজ করছে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত ছুৎমার্গ এবং দেখনদারি মানসিকতা।  বড় কাজে ছোট বিরোধগুলিকে সরিয়ে রেখে, নিক্তিওজন ছেড়ে পংক্তি ভোজনের কথা বললেই সদিচ্ছাতাড়িত উদারবাদের দায়ে পড়তে হয়। জানি, বহু দিনের অভ্যাসজাত এই রাজনৈতিক-সাংগঠনিক সংস্কৃতির শিকড় এখনই উপড়ে ফেলা দুরাশা।

তবু শিয়রে শমন বলে বন্ধুদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি নিজেদের স্বতন্ত্র পোর্টাল, ইউ টিউব চ্যানেল ইত্যাদি বজায় রেখেও আমরা যৌথ উদ্যোগ নিতে পারি এবং দায়দায়িত্ব ভাগাভাগি করে পালন করতে পারি। 

আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব:
এক. আমরা বিকল্প অনলাইন মিডিয়ার একটি ফোরাম বানাতে পারি। দিল্লিতে ছোটদের মধ্যে বড়রা মিলে একটা তৈরি করেছে যা মূলত অনলাইন বিরোধী মাধ্যমকে আইনি শেকল পড়ানোয় মোদি সরকারের প্যাঁচপয়জারের মোকাবিলার প্রয়োজনে। এর সদস্য কলকাতার কেউ কেউ হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে মাথায় রেখে আমরা অন্তত আগামী ছয়মাসের জন্য একসঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা নিতে পারি।

দুই. আমরা একে অপরের পোর্টালের লেখা, রিপোর্ট, ছবি, ভিডিও বা সেগুলোর  লিংক শেয়ার করব। মাল্টি-লিঙ্গুয়াল সাইটের লেখা অনুবাদ করে পোস্ট করব।  লিটল ম্যাগগুলিও অনেকে এখন অনলাইন। আমরা তাদের লেখাও শেয়ার করতে পারি।

তিন: জেলায় জেলায় গিয়ে সরেজমিন রিপোর্ট জরুরি যা নেতা-নেত্রীদের তুলনায় মানুষের মন বোঝার চেষ্টা করবে, আম জনতার মধ্যে ধর্মীয় ও অন্যান্য বিভাজন বা দাঙ্গা বাঁধানোর যড়যন্ত্রগুলো সম্পর্কে সতর্ক করবে। তবে রেস্তর অভাবে আমাদের জেলার বন্ধুদের উপর ভরসা করে নাগরিকদের সাংবাদিকতাকে উৎসাহ দিতে হবে।

চার.আমরা ফোরামের একটি ইউ টিউব চ্যানেল তৈরি করব বা ইতিমধ্যে যেগুলো আছে তাকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব ও যৌথ উদ্যোগে ভিডিও গ্রাউন্ড রিপোর্ট, সাক্ষাৎকার, টক-শো, বিতর্কগুলি প্রচার করব। বাংলা ও  ইংরেজিতে এবং পারলে হিন্দি ও উর্দুতে। 

পাঁচ. ফোরামগত ভাবে বা নিজেদের নামে আমরা টক শো ইত্যাদি হোস্ট করার জন্য এবং এডিটিং ইত্যাদির জন্য সম্ভব হলে একটি কাজ চালানোর মতো স্টুডিও খুঁজতে পারি। ইতিমধ্যে যাদের এমন পরিকাঠামো আছে তারা চাইলে এসব তাদের জায়গায় হতে পারে। 

ছয়: এসব কাজের জন্য বিভিন্ন ভাষার বন্ধু লেখক-সাংবাদিক-একটিভিস্ট এবং মাল্টি-মিডিয়া প্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা জরুরি। মূল ধারার মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের কারো কারো সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। অভিজ্ঞতায় জানি, নামী মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত সমমনস্ক লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরা আমাদের জন্য লিখতে বা বলতে আগ্রহ বোধ করবেন যদি আমরা গণপরিসরে ভিজিবিলিটি বাড়াতে পারি, তাদের বক্তব্য নিয়ে চর্চা লোকের কাছে পৌঁছয়। একই লেখক-বুদ্ধিজীবীর লেখা-বলা বিভিন্ন সাইটে গেলে তারা আগ্রহী হবেন বলে মনে হয়।সাত: নিজেদের পোর্টাল ইত্যাদির প্রোমোশন আপাতত একটু কমিয়ে যদি সবাই মিলে ফোরামের জন্য ভিডিও তোলা এবং সম্পাদনার কাজ ভাগ করে নিতে পারি তবে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো যাবে। 

সাত: আমাদের ভাঁড়ে মা ভবানী। কিন্তু ক্রাউড ফান্ডিং এর উদ্যোগ নিলে সাড়া মিলবে বলে মনে হয়। সম মনস্ক সংগঠনগুলির থেকে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে।

আট :এসব কাজ সমন্বয়ের জন্য পোর্টাল ও চ্যানেলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ছোট কমিটি হতে পারে। এর জন্য একটা হোআ গ্রূপ হলে ভালো হয়।
আমার বিনীত আবেদন একটু ভেবে দেখুন, মতামত দিন। আগ্রহীদের মধ্যে আবেদনটি শেয়ার করুন।

আপনার/আপনাদের নিজস্ব পরিকল্পনাও স্বাগত। তবে সময় বেশি নেই। সলতে পাকানয় কাল বিলম্ব না করাই মঙ্গল। অধিকাংশ চাইলে দ্রুত একটি মিটিং ডাকা যায়।

বিশ্বজিৎ রায় (মধু) - 9239069934

Back to Home Page

Frontier
Dec 23, 2020


Biswajit Roy biswajitr60@gmail.com

Your Comment if any